প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আরও সবুজ একটি ভবিষ্যত বিনির্মাণে পিফোরজি (পি৪জি) শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেয়া নেতাদের আরও নিবিড়ভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি খাদ্য-পানি-জ্বালানিসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিয়োগকারী, নীতিনির্ধারক ও সৃজনশীল উদ্যোক্তাকে সম্পৃক্ত করাসহ পি৪জি-কে (পার্টনারিং ফর গ্রীন গ্রোথ এ্যান্ড দ্য গ্লোবাল গোলস-২০৩০) তিনটি পরামর্শ দিয়েছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ধরিত্রীর সুরক্ষায় আরও একবার বিশ্বনেতাসুলভ ভূমিকা রাখলেন। এ জন্য আন্তর্জাতিক মহলে তার সুনাম ও মর্যাদা বাড়বে নিঃসন্দেহে। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তার দেয়া তিনটি পরামর্শের মধ্যে প্রথমটিতে বলেন, পিফোরজির পাঁচটি মূল ক্ষেত্র-খাদ্য, পানি, জ্বালানি, শহর ও সার্কুলার অর্থনীতিতে আরও বেশি ফিন্যান্সিয়র, বিনিয়োগকারী, নীতিনির্ধারক ও সৃজনশীল উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ত করতে এর কর্মভিত্তিক পদ্ধতির বিষয়ে আরও বেশি প্রচার চালানো এবং সেরা কর্মপদ্ধতিগুলোর বিনিময় আরও বাড়াতে হবে। তৃতীয় পরামর্শে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আরও সবুজ একটি ভবিষ্যত নির্মাণে নেতৃবৃন্দকে নিবিড়ভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, চলমান কোভিড-১৯ মহামারীতে নানা প্রতিকূলতার সৃষ্টি হলেও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশবান্ধব প্রবৃদ্ধির দিকে বিশ্বকে নিয়ে যাওয়ার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। আর সেই লক্ষ্যে জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশ স্থানীয়ভাবে অভিযোজন কার্যক্রম জোরদার করাসহ যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, সেসব বিষয়ও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য, বৈশ্বিক জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০১৭ সালে পিফোরজি নামে এই বৈশ্বিক উদ্যোগ শুরু হয়। পিফোরজি নেটওয়ার্কে বাংলাদেশ, চিলি, কলম্বিয়া, ডেনমার্ক, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, রিপাবলিক অব কোরিয়া, মেক্সিকো, নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভিয়েতনাম- এই ১২টি দেশ আছে। এ ছাড়া ডব্লিউআরআই, ডব্লিউএএফ, আইএফসি, জিজিজিআই ও সি ৪০ সংগঠন এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে আছে। প্রাকৃতিক কারণেই বসবাসের এই একমাত্র গ্রহটি ক্রমশ বসবাস অযোগ্য হয়ে উঠতে শুরু করেছে। বিজ্ঞানীরা আবেগের উর্ধে উঠে বস্তুগত বিবেচনাবোধ থেকে যে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ দাঁড় করান তা থেকে মানব জাতির সতর্ক ও সচেতন হওয়া জরুরী। বিশ্বখ্যাত জ্যোতি পদার্থবিজ্ঞানী প্রয়াত স্টিফেন হকিং যে কথা বলেছেন তা বিশ্ব নেতৃত্ব দানকারী ব্যক্তিবর্গের জন্য চিন্তার বিষয়। বিশ্বের উৎপত্তি ও বিলয় সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে যত মতবাদ প্রচারিত হয়েছে সেগুলোর ভেতর এই বিজ্ঞানীর বক্তব্যকে অতীব গুরুত্বের সঙ্গে দেখে আসছে বিশ্ববিবেক। হকিং এর আগে বলেছিলেন, এক হাজার বছরের মধ্যে পৃথিবী মানুষের জন্য সম্পূর্ণভাবে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। তার আগেই পৃথিবী ছেড়ে নক্ষত্রপুঞ্জে ছড়িয়ে পড়তে হবে। পরে তিনি সেই সময় পরিধিকে আরও গুটিয়ে এনেছেন। বলেছেন, মানুষের হাতে কয়েক শ’ বছরের বেশি সময় নেই। উল্কাপিন্ডের আছড়ে পড়া, মেরু অঞ্চলের বরফ গলন, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদ কমে আসাসহ নানা বিপর্যয় হুমকি দিচ্ছে পৃথিবীকে। একবার বিশ্ব পরিবেশ দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ নিজ বাসস্থান ও কর্মস্থলে গাছ লাগানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই প্রবণতাটি সন্তানদের মধ্যে জাগিয়ে তোলার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছিলেন। জলাধার সংরক্ষণ ও নদীর পুনর্জীবন দানের বিষয়টিও এবার জোরালোভাবে উচ্চারিত হয়েছে, যা গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব প্রতিরোধ ও মোকাবেলায় বর্তমান সরকার নানা আঙ্গিকে কাজ করে চলেছে। বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণের মতো পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষও এখন অনেক বেশি সোচ্চার ও সচেতন। আগামী দিনের বিশ্ববাসীর জন্য সবুজ ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে হলে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ আমলে নিতে হবে অবশ্যই।
Leave a Reply